ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজ সমূহ। ফ্রিল্যান্সিং-এ কোন কোন কাজ করতে হয় ?

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজসমূহ কি কি
Popular freelancing jobs for beginners


ক্যরিয়ার হিসেবে হোক অথবা টাকা আয়ের মাধ্যম হিসেবেই হোক, ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয়তা তরুন সমাজের মধ্যে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে । 

দেশের ছাত্র সমাজ থেকে শুরু করে বেকার তরুনেরা পর্যন্ত আশার আলো দেখছেন এই মুক্ত পেশায়। যার ফলে অনেকের মনে ফ্রিল্যান্সিং-কে নিয়ে উদয় হচ্ছে নানা রকমের প্রশ্ন ।

ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজসমুহ কি কি ? 

ফ্রিল্যান্সিং বলতে কোন কোন কাজকে বোঝায়? ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে কোন ধরনের কাজ করতে হবে ?বিগত কয়েকদিন ধরেই এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি নতুনদের কাছ থেকে ।  

ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজসমুহের তালিকা নিয়ে সাজানো এই পোস্টটি, ফ্রিল্যান্সিং জগতে নতুনদের জন্য অনেক কার্যকারী পোস্ট হবে আশা করি। 


ফ্রিল্যান্সিং বলতে কোন কাজকে বোঝায়?

ফ্রিল্যান্সিং যে কোনো ধরনের কাজ হতে পারে । যেমন ধরুনঃ আপনি ভালো ফটো এডিটিং পারেন ,আমি আপনার সাথে ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে,আমার একটা ছবি আপনার কাছ থেকে এডিট করিয়ে নিলাম। তাহলে আপনি যে কাজটি করলেন সেটাই ফ্রিল্যান্সিং ।

আরো পরুন :

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর  কাজসমুহ পাওয়া যায় নিদ্রিষ্ঠ কিছু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে । এই মার্কেটপ্লেস গুলুতে যে কাজগুলোর চাহিদা বেশি, সে কাজগুলোই বর্তমানের জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং জবস।  এরকমেই কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং জবস এর তালিকা নিয়েই আমাদের আজকের পোস্টটি সাজানো।  


ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজ সমূহ কি কি ?

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজসমূহ নিদ্রিষ্ঠ কয়েকটি কেটাগরিতে ভাগ করা যায়। প্রায় সব ধরনের মার্কেট-প্লেসে একই ধরনের কাজ পাওয়া যায়। নিচে জনপ্রিয় সব ফ্রিল্যান্সিং জবস নিয়ে আলোচনা করা হল ।

১ ডিজাইনিং 

ডিজাইনিং এর আওতায় যেসব  ফ্রিল্যান্সিং জবস পাওয়া যায় সেগুলো হল ; ওয়েব ডীজাইনি, গ্রাফিক্স ডিজাইন,লোগো ডিজাইন ইত্যাদি ।

ওয়েব ডিজাইন 

ওয়েব ডিজাইন অতি পরিচিত একটি ফ্রিল্যান্সিং জবস । এই ধরনের কাজে প্রোগ্রামিং ল্যঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে একটি ওয়েব পেজ অথবা একটি সম্পুর্ন ওয়েবসাইট ডিজাইন করে ক্লাইন্টের কাছে ডেলিভার করতে হয় ।

ওয়েব ডিজাইন শিখতে ছয় থেকে সাত মাস বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যঙ্গুয়েজ এর ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হয় যেমন >> HTML, CSS, Java-Script, Bootstarp ইত্যাদি । 

গ্রাফিক্স  ডিজাইন 

গ্রাফিক্স ডিজাইন বহুল আলোচিত একটি ফ্রিল্যান্সিং জবস। বিভিন্ন ধরনের ফোটো ও এনিমেশন ডিজাইনিং স্যফটওয়ার দিয়ে ফটো, টি-শার্ট, ব্যনার, এডভারটাইসমেন্ট, মাস্টারকার্ড, এনিমেশন ইত্যাদি ডিজাইন করে ক্লাইন্টের কাছে ডেলিভার করাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের  কাজের মধ্যে পরে । 

লোগো ডিজাইন

লোগো ডিজাইন বলতে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির লোগ ডিজাইন করে দেয়ার কাজ। যদিও লোগ ডিজাইনকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের একটি অংশ হিসেবে ধরা হয় কিন্তু বর্তমানে এই কাজটি নিজেই একটি ক্ষেত্র তৈরি করছে। 

আরো পড়ুন ঃ

অনলাইনে ইনকাম মোবাইল দিয়ে ২০২১। মোবাইল দিয়ে কীভাবে অনলাইন থেকে টাকা আয় করা যায় ?

অনলাইনে টাকা আয়ের ৮ টি জনপ্রিয় অ্যাপ । ৮ টি জনপ্রিয় মোবাইল এপ্লিকেশন দিয়ে টাকা আয় করুন ।

২ স্যফটওয়ার ডেভলপমেন্ট 

যেকোনো ধরনের স্যফটওয়ারকে পূর্বের থেকে উন্নত ও সুবাধাজনক করার যে কাজ সেটাই হল স্যফটওয়ার ডেভলপমেন্ট। ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট, এন্ড্রয়েড এপস ডেভলপমেন্ট, উইন্ডোস এপ্লিকেশন ডেভলপমেন্ট, আইফোন এপস ডেভলপমেন্ট, এসব ফ্রিল্যান্সিং জবস স্যফটওয়ার ডেভলপমেন্টের আওতায় পরে। 

ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট 

কোনো ওয়েবসাইটে হটাৎ কোন সমস্যা দেখা দিলে, সেই সমস্যা বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে সমাধান করার কাজটিই হল ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট। এ কাজের জন্য প্রোগ্রামিংয়ের ব্যপক জ্ঞান থাকা দরকার। 

এন্ড্রয়েড এপস ডেভলপমেন্ট 

স্মার্টফোনের বিখ্যাত অপারেটিং সিস্টেম হল গুগলের এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। এন্ড্রয়েড এর  বিভিন্ন এপস প্রোগ্রামিং ল্যঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ডেভলপ করার কাজই হল এন্ড্রয়েড এপস ডেভলপমেন্ট। এ-কাজের  জন্য JAVA সহ অন্যান্য  প্রোগ্রামিং ল্যঙ্গুয়েজ-এ দক্ষ হওয়া প্রয়োজন।

ওয়ার্ডপ্রেস 

বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রস একটি জনপ্রিয় কন্টেন্ট মেনেজমেন্ট  সিস্টেম ( সি এম এস )।কোনো প্রকার কোডিং এর ঝামেলা ছাড়াই একটি ওয়েবসাইট বানানোর জন্য ওয়ার্ডপ্রেস বিখ্যাত।আজকাল বিভিন্ন ফ্রিল্যন্সিং মার্কেটপ্লেসে প্রচুর পরিমানে ওয়ার্ডপ্রেস এর কাজ পাওয়া যাচ্ছে।  

আরো বেশ কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং জবস আছে যেগুলো ডেভলপমেন্ট শাখার মধ্যে আসে, যেমন >> আইফোন এপস ডেভলপমেন্ট, জাভাস্ক্রিপ্ট, পাইথন , লিনাক্স সহ ইত্যদি।  


৩ রাইটিং 

ওয়েবসাইট কন্টেন্ট রাইটিং, কপিরাইটিং, বিজনেস প্লান রাইটিং, আর্টিকেল রাইটিং সহ এমন সব ফ্রিল্যন্সিং জবস রাইটিং সেকশনের আনডারে পরে ।

বিজনেস প্লান রাইটিং 

কোনো কোম্পানির বিজনেস কিভাবে চলে , তাদের বিজনেস পলিসি, বিজনেস গোলস, কোম্পানি কিভাবে সার্ভিস প্রোভসিড করে এসব লিখে ক্লাইন্টকে জমা দেয়ার নাম হল বিজনেস প্লান রাইটিং। 

ওয়েবসাইট কন্টেন্ট রাইটিং

একটি ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজ যেমন>> প্রিভেসি পলেসি, এবাইট আস, অথবা কিছু ব্লগ পোস্ট ইত্যাদি সব লিখে দেয়াই হল ওয়েবসাইট কন্টেন্ট রাইটিং । 

কপিরাটিং

কপিরাইটিং হল এক ধরনের রাইটিং স্কিল। কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের এডভারটাইসমেন্ট কন্টেন্ট লেখা, কোনো প্রেজেন্টেশন তৈরি করা, কোনো পন্যের বিজ্ঞাপন বানানো ইত্যাদি হল একজন কপিরাইটার এর কাজ। 

আর্টিকেল রাইটিং

কোনো ব্লগসাইটের কন্টেন্ট লেখার কাজই মুলত আর্টিকেল রাইটিং । একজন আর্টিকেল রাইটার নিদ্রিষ্ট কোনো বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকে। কেউ টেকনলজিতে, কেউ হেলথ নিশে আর্টিকেল লিখতে দক্ষ। 

৪ মার্কেটিং 

কোনো প্রতিষ্ঠানের পন্যের ভালোমানের সেল পাওয়ার জন্য মার্কেটিং করা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। অনেক প্রতিষ্ঠান  এর কাজ ফ্রিল্যান্সারের দ্বারা করিয়ে নেয়। এই ধরনের কিছু  ফ্রিল্যান্সিং জবস হল ডিজিটাল মার্কেটিং, সি পি এ মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিং  ইত্যাদি ।

ডিজিটাল মার্কেটিং 

কোনো পন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে মার্কেটিং করাই হল ডিজিটাল মার্কেটিং। শোসাইল মিডিয়া মার্কেটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিং ইত্যাদি সবই ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত।     

সি পি এ মার্কেটিং 

সি পি এ মার্কেটিং হল এক ধরনের মার্কেটিং টেকনিক। একাজে মার্কেটারকে নিদ্রিষ্ট মার্কেটপ্লেসে গিয়ে পন্যে একটি ইউনিক মার্কেটিং লিংক নিতে হয়।

এই লিংক এর মাধ্যমে যদি কেও পন্য কিনে তাহলে কমিশন অনুযায়ী মার্কেটার টাকা পাবে

ই-মেইল মার্কেটিং 

ই-মেইল মার্কেটিং বলতে প্রধানত, আপনার পন্যের তথ্যগুলো  ই-মেইল এর  মাধ্যমে আপনার কাস্টমারের নিকট পৌঁছে দেয়া

৫ এডমিন জবস 

এডমিন জবস বলতে মুলত কোনো এডমিনের ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট হয়ে তার প্রয়োজনীয় কাজ করে দেয়া।  এডমিনের ই-মেইল এনসারিং থেকে শুরু করে সোসাইল মিডিয়া একাউন্ট মেইনটেইন এর কাজও করতে হয় এই ধরনের ফ্রিল্যান্স জবে। 

কিছু এডমিন জবস

ডাটা এন্ট্রি

অনেকেই মনে করে ডাটা এন্ট্রি লেখালেখির কাজ,  একাজে মনে হয় খুব বেশি লিখতে হয়। ব্যপারটা ঠিক এমন না, ডাটা এন্ট্রি মুলত এমন ডাটা বা তথ্য লেখার কাজ যা কম্পিউটারের ( আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি) দ্বারা  করিয়ে নেয়া সম্ভব না। 

ওয়েব রিসার্চ 

এডমিনের হয়ে কোনো বিষয়ের ওপর রিসার্চ করা। ওয়েব রিসার্চ করে এডমিনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বা ডাটা সংগ্রহ করা। 

ই-মেইল রিপ্লাই 

একজন এডিমিনের ই- মেইল  রিপ্লাই দেওয়ার কাজও এডমিন জবস এর মধ্যে পরে।

প্রোজেক্ট মেনেজমেন্ট 

এডমিনের একটি প্রজেক্ট কিভাবে শেষ করে নেয়া যাবে,  কতগুলো ম্যন হায়ার করতে হবে, এডমিনের হয়ে কোথায় কোথায় মিটিং করতে হবে, এক কথায় একটি প্রোজেক্ট সম্পুর্নভাবে শেষ করে নেয়ার কাজই হল প্রোজেক্ট মেনেজমেন্ট 

৬  সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন :

SEO বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন হল কোন কন্টেন্ট এর জন্য সার্চ ইঞ্জিনকে সাজানো।  সার্চ ইঞ্জিনকে জানিয়ে দেয়া যে আমার এই কন্টেন্ট ( ব্লগ পোস্ট, ভিডিও,  ছবি, এ-সবই কন্টেন্ট ) যেন সার্চ ইঞ্জিন প্রথম স্থানে দেখায়। বর্তমানে একাজের চাহিদা ব্যপক।   

৭ ট্রান্সলেশন :  

যারা বিভিন্ন ভাষায় লিখতে ও পড়তে পারদর্শী, তাদের জন্য বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে এই ধরনের জবস পাওয়া যায়। 
ক্লায়েন্টকে কোনো লেখা বা অডিও এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় ট্রান্সলেশন করে দিয়ে পেমেন্ট নিলে কাজ শেষ।

৮ ভিডিও এডিটিং : 

দিনকে দিন মানুষের মধ্যে ইউটিউব,  টিকটক, অথবা অন্যান্য প্লাটফর্মে ভিডিও বানিয়ে টাকা আয় করার প্রবনতা বাড়ছে। 
তাই ভিডিও এডিটরের চাহিদাও বাড়ছে। ভালো ভিডিও এডিটিংং স্কিল থাকলে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে অনেকেই ভিডিও এডিটিংকেই বেছে নিচ্ছে।

উপরে উল্ল্যেখ্যিত ফ্রিল্যান্সিং জবসমূহ বর্তমানে মার্কেটপ্লেসে বেশ জনপ্রিয় এবং এসব ক্ষেত্রগুলোতে কাজের পরিমানো ব্যপক।   

আপনি চাইলে যেকোনো একটি কাজকে বেছে নিতে পারেন, প্রত্যেকটিই সম্ভাবনাময় এবং ভালো সবগুলোতেই ভালো ক্যরিয়ার গঠন করা সম্ভব। 

উপরের কাজ গুলো ছাড়া আরো অনেক ফ্রিল্যান্সিং জবস মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যায় আপনি চাইলে সেই কাজগুলো সম্পর্কে ধরনা নিতে পারেন এবং কাজে নামতে পারেন।  

অনেক ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা আমার দেয়া কাজের  তালিকার বাইরে অন্য কোনো কাজকে বেছে নিয়ে মোটা অংকের টাকা ইনকাম করছেন। তাই আপনাকে আমার দেয়া তালিকা থেকেই কোনো কাজ বেছে নিতে হবে এমনটা ভাববেন না।

আপনার ফ্রিল্যান্সিং যাত্রা  শুভ হোক এই কামনাই রইল।
       
 


Next Post