বিরিয়ানি রেসিপি, বিরানি রেসিপি, বিরিয়ানি রেসিপি উপকরণ, biryani ranna

বিরিয়ানি খেতে আমরা কমবেশি সকলেই ভালোবাসি। দুপুরে খাবারের মেনুতে বিরিয়ানি হলে খাওয়া দাওয়া একেবারে জমে যায়। অনেকে বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করলেও, বিরিয়ানি কিভাবে রান্না করতে হয়ে সেটা না জানে কারণে বিরিয়ানি খাওয়া থেকে পিছিয়ে যায়।

বিরিয়ানি রান্না করার প্রক্রিয়া জানা যায় থাকলে মাঝে মাঝে রান্না করে বিরিয়ানি খাওয়া একটা সুযোগ তৈরি হয়। তাই এই ছোট লেখাটিতে আপনাদের জানতে চেষ্টা করব বিরিয়ানি রেসিপি সম্পর্কে। বিরিয়ানি রান্না করার রেসিপি ও বিরিয়ানি রান্নার উপকরণ জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পরতে হবে।


বিরিয়ানি রেসিপি কি?

রেসিপি হল কতগুলো নির্দেশনা যা, কোনো বিশেষ ধরনের খাবার তৈরি করার ক্ষেত্রে ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সম্পর্কে দেওয়া হয়। বিরিয়ানি রেসিপিও ঠিক তেমনি। কিভাবে বিরিয়ানি রান্না করতে হয়, কি কি উপকরণ লাগে?, কতটুকু পরিমাণে উপকরণ লাগে, কর সময় ধরে রান্না করতে হয়ে সেই বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা বা গাইডলাইন হল বিরিয়ানির রেসিপি।

অনেকে মনে করে বিরানি রেসিপি বেশ জটিল একটি রেসিপি, বিরিয়ানি রান্না ( biryani ranna ) করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া। তাই আগে থেকেই ভয় পাওয়ার কারণে তারা বিরিয়ানি রান্নায় অনুৎসাহিত হয়ে পড়ে।

এই আর্টিকেল আমি আপনাকে বিরিয়ানি রেসিপি গুলোর মধ্যে সহজ রেসিপি দেখানোর চেষ্টা করব, যাতে করে আপনি সহজে বিরানি রেসিপি শিখে বিরিয়ানি রান্না করতে পারেন।


বিরিয়ানি রেসিপি


বিরিয়ানি রেসিপি উপকরণ

প্রথমেই আপনাদের জানিয়ে বিরিয়ানি রেসিপির উপকরণ সম্পর্কে। ভালোমানের বিরিয়ানি রান্না করতে কোন কোন উপকরণ কতটুকু পরিমাণে প্রয়োজন হবে সেটা জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ন।

তাই চলুন প্রথমেই দেখে নেই বিরিয়ানি রান্নার উপকরণ গুলো কি কি? নিচে একটি ছক এ বিরিয়ানি রান্নার উপকরণ ও তার পরিমাণ স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি আপনাদের বুঝতে সহজ হবে। 


উপাদান 

 পরিমান 

 বাসমতি চাল বা অন্যান্য সুগন্ধি চাল 

১ কেজি 

গরু বা ছাগলের মাংস

১.৮ থেকে ২ কেজি 

তেল ( সয়াবিন )

৪০০ গ্রাম 

গরম গুড়া মসলা

১ টেবিল চামুচ

পেয়াজ কুচি

২ কাপ 

লবণ

প্রয়োজন মত

তেজপাতা 

৬-৮ টি

আলু বোখরা 

৪-৫ টি

এলাচ

৪-৫ টি

জয়ফল

১টি

আদা বাটা 

১ টেবিল চামুচ

রসূন বাটা 

১ টেবিল চামুচ

গুড়ো মরিচ

১ টেবিল চামুচ

বিরিয়ানির গুড়ো মসলা 

১ টেবিল চামুচ

টক দই

১ টেবিল চামুচ

কাচা মরিচ

১০ থেকে ১২ টি

হলুদ গুড়ো

১-২ চা চামুচ 

জিড়া

১ চা চামুচ 


Biryani ranna | বিরিয়ানি রান্নার প্রক্রিয়া

বিরিয়ানি রান্না করার মূলত দুটি প্রধান ধাপ রয়েছে একটি হল মাংস রান্না করা, অন্যটি রাইস রান্না করা। প্রথমে  আপনাকে বিরিয়ানির জন্য মাংসরটি রান্না করে নিতে হবে এরপরে রাইস রান্না করে বিরিয়ানির রান্নার পরবর্তী ধাপটি সম্পন্ন করতে হবে।

তাই একটি সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্না করার জন্যে আমরা প্রথমে বিরিয়ানির মাংস রান্না করব। তাহলে নিচে দেখে নিন কিভাবে বিরিয়ানি রান্নার জন্যে মাংস রান্না করবেন।


বিরিয়ানির মাংস রান্না

নিচে বিরিয়ানির মাংস রান্নার প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে তুলে ধরা হল। বিরিয়ানি রান্নার উপকরণ গুলোই মাংস রান্নার মূল উপকরণ হিসেবে ব্যাবহার করা হবে। তবুও আপনাদের সুবিধার্থে নিচে মাংস রান্নার উপকরণ গুলো একবারের জন্যে ছক আকারে তুলে ধরা হল। 

উপাদান 

পরিমান

গরু বা ছাগলের মাংস 

১.৮ থেকে ২ কেজি 

তেল ( সয়াবিন )

৩৫০ গ্রাম 

গরম গুড়া মসলা

১ টেবিল চামুচ

পেয়াজ কুচি

১.৫ কাপ 

লবণ

প্রয়োজন মত

তেজপাতা 

৪-৫ টি

জয়ফল

১টি

আদা বাটা 

১ টেবিল চামুচ

রসূন বাটা 

১ টেবিল চামুচ

গুড়ো মরিচ

১ টেবিল চামুচ

বিরিয়ানির গুড়ো মসলা 

১ টেবিল চামুচ

টক দই

১ টেবিল চামুচ

হলুদ গুড়ো

১-২ চা চামুচ 

 

ধাপ ০১

প্রথমে একটি পেন অথবা কড়াই এ  ৩৫০  গ্রাম পরিমাণে তেল নিন। এর পরে ১.৫ কাপ পেঁয়াজ কুচি গরম তেলে নিয়ে ভাজতে থাকুন।

বিরিয়ানি রেসিপি, বিরানি রেসিপি, উপকরণ


ধাপ ২

পেয়াজ বাদামি রং ধারণ করলে সেথায়, ১.৫ চা চামুচ হলুদ গুঁড়ো, ১ টেবিল চামুচ আদা বাটা ও ১ টেবিল চামুচ রসুন বাটা, ১ টেবিল বিরিয়ানির মসলা, ১ টেবিল চামুচ মরিচ গুঁড়ো, লবণ প্রয়োজন মত, টক দই ২ টেবিল চামুচ, তেজপাতা, জয়ফল, সেই গরম তেলে দিয়ে পেস্ট বানিয়ে ফেলুন।

লক্ষণীয়: এখানে চা চামুচ ও টেবিল চামুচ ভালোভাবে খেয়াল করবেন। না হলে আপনি সমস্যায় পরে যাবেন।

বিরিয়ানি রান্নার প্রক্রিয়া


ধাপ ৩

এর পরে মাংস দিন এবং ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। মনে রাখবেন কোনো পানি ব্যাবহার করবেন না। মাংস আগে থেকেই ধুয়ে রাখবেন এবং ত থেকে যে পানি বের হবে সেটা দিয়েই সুন্দরভাবে মাংস রান্না হয়ে যাবে।

ধাপ ৪

নিদ্রিষ্ট সময় পর পর মাংস ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন যাতে করে পাত্রের তলানির সাথে মাংস লেগে না যায়। খুব বেশি কড়া পাক না করে মোটামুটি রান্না হয়ে গেলে মাংস নামিয়ে ফেলুন।

লক্ষণীয়: বিরিয়ানি রান্নার জন্য মাংসটি সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট ধরে রান্না করবেন। এর বেশি সময় ধরে রান্না না করাই ভালো। এবং মাংসে সামান্য ঝোল রাখার চেষ্টা করবেন।

এই তো হয়ে গেল আপনার মাংস রান্না করা এবার বিরিয়ানি রান্না করার মূল পর্বে যাওয়া যাক। মাংস রান্না করা পরে পরেই আপনাকে বিরিয়ানি রান্নার কাজে নেমে পড়তে হবে। নিচে বিরিয়ানি রান্নার প্রক্রিয়া দেখানো হল।


বিরিয়ানি রেসিপি মূল ( বাংলা )

বিরিয়ানি রান্নার মূল পর্বে প্রথমে আপনাকে চাল ধুয়ে রেডি করে রাখতে হবে। মনে রাখবেন চাল থেকে পানি জড়িয়ে নেওয়া অতি জরুরি। এরপরে ছকে দেখানো প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হাতের কাছে তৈরি রাখবেন। So, রান্নার মূল পরে চলে যাই।

 

উপাদান 

 পরিমান 

 বাসমতি চাল বা অন্যান্য সুগন্ধি চাল 

১ কেজি 

তেল ( সয়াবিন )

৪০০ গ্রাম 

পেয়াজ কুচি

২ কাপ 

লবণ

প্রয়োজন মত

তেজপাতা 

৬-৮ টি

আলু বোখরা 

৪-৫ টি

এলাচ

৪-৫ টি

কাচা মরিচ

১০ থেকে ১২ টি

জিড়া

১ চা চামুচ 

ডালচিনি

৫-৬ টুকরো 

ঘি 

১ চা চামুচ 

ধাপ ০১

প্রথমে পাত্রে ( পাতিল বা কুকিং পেন ) তেল গরম করতে দিন। এর পরে ১ টেবিল চামচ এর সামান্য বেশি পেয়াজ কুচি ভাজতে থাকুন। এর সাথে, ৪-৫ টি এলাচ, ১ চা চামুচ জিরা, ডাল-চিনি ও তেসপাতা যোগ করে সর্বোচ্চ ৪ মিনিট ভেজে নিন।

লক্ষণীয়: বিরিয়ানি রান্নার ক্ষেত্রে পেয়াজ সহ অন্যান্য উপাদান বেশি ভাজা থেকে বিরত থাকুন।


ধাপ ০২

পেয়াজ সহ অন্যান্য উপাদান  ৩-৪ মিনিট ভাজার পড়ে সেখানে ১ কেজি পানি ঝরানো বাসমতি অথবা  সুগন্ধি পোলাও এর চাল যুক্ত করুন। চালগুলো পেয়াজ সহ অন্যান্য উপাদান এর সাথে কিছুক্ষণ ( ৩-৫ মিনিট )ভেজে নিন। এর পরে দুই লিটার ( গরম পানি ) পানি ও ১০-১২ টি কাঁচা মরিচ সহ চাল সিদ্ধ হতে দিন।

লক্ষণীয়: আপনি যে পরিমাণ চাল ব্যাবহার করবেন তার দ্বিগুণ পরিমাণ গরম পানি ব্যাবহার করবেন। যেমন, ৫০০ গ্রাম চাল এর জন্যে ১ লিটার গরম পানি।

ধাপ ০৩

মোটামুটি ১৫ মিনিট পরে পাতিলের ঢাকনা খুলে রাইসে সামান্য পানি থাকা অবস্থায় রান্না করা গরু বা ছাগলের মাংস ঢেলে দিন এবং সাথে ৪ -৫ টি আলু বোখরা সহ মটরশুঁটি, কিসমিস, বাদাম যুক্ত করতে পারেন।

এই পর্যায়ে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় হল আপনার চুলার আঁচ কমিয়ে দিতে হবে। সামান্য আছে চুলা জ্বালাতে থাকুন এবং মিনিট ৫ এর পরে বিরিয়ানি নেরে দিন এবং পরবর্তী ধাপ অনুসরন করুন ।

লক্ষণীয়: ভালোভাবে লক্ষ করবেন যেন পাত্রের তলানির সাথে বিরিয়ানি বসে না যায়। এতে করে স্বাদের বিকৃতি হতে পারে। তাই হালকা আঁচ এ রান্না করার চেষ্টা করুন।

ধাপ ০৪

এই পর্যায়ে আপনার বিরিয়ানি রান্না হয়ে যাওয়ার পথে, সর্বশেষে এক চা চামুচ ঘি যুক্ত করে রান্না হওয়া বিরিয়ানিটি দম এ বসিয়ে দিন।

হয়ে গেল আপনার বিরিয়ানি রান্না। এভাবে বিরিয়ানি রান্না করা যথেষ্ট সহজ এবং সবাই এই পদ্ধতিতে বিরিয়ানি রান্না করতে পারবেন।

আমার ধারণা, আর্টিকেলের শুরুতে যাদের মনে হচ্ছিল বিরানি রান্না করা অনেক টা কঠিন এই পর্যন্ত এসে তাদের এই ধারণা পাল্টেছে।


বিরানি রান্নার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় কিছু বিষয়। 

অনেকেই বিরিয়ানি রান্নার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ্য না করার কারণে, ভুল করে ফেলেন। যেটা আপনার বিরিয়ানির স্বাদের বিকৃতি ঘটিয়ে দেয়। নিচে এরকমই কিছু ভুল ও এদের সমাধান তুলে ধরা হল।


০১. মাংস রান্নার অতিরিক্ত পানি

বিরিয়ানি রান্না করার ক্ষেত্রে মাংস রান্নার বেলায় অনেকেই অতিরিক্ত পানি যুক্ত করেন যেটা করা যাবে না। মাংসে অতিরিক্ত পানি যুক্ত না করে টক দই অথবা দুধ যোগ করতে পারেন। কিছু না যুক্ত করে মাংসের জমানো পানি দিয়ে রান্না করা সম্ভব।


০২. ভারী আঁচ এ বিরিয়ানি রান্না করা

বিরিয়ানি রান্না মোটামুটি শেষ পর্যায়ে বেশি আঁচ এ চুলা না জ্বালানই ভালো। এতে করে পাত্রের তলানির সাথে বিরিয়ানি লেগে যাওয়ার শঙ্কা থাকে যেটা খাবারের স্বাদের বিকৃতি ঘটিয়ে দেয়।


০৩. বিরিয়ানির চাল না ভেজে নেওয়া

বিরিয়ানিটি ঝরঝরে বানানোর জন্য চাল গুলো ভেজে নেওয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বিরিয়ানির চাল না ভেজেই রান্না শুরু করে দেয় এতে করে চাল গুলো একটি সাথে আরেকটি লেগে গিয়ে খাবারের সৌন্দর্য নষ্ট করে। 



Copyright Disclaimer 

The images provided in this article are collected from various sources of internet, like Google,Youtube and some Website. 

Copyright Disclaimer under section 107 of the Copyright Act 1976, allowance is made for “fair use” for purposes such as criticism, teaching, scholarship, comment, news reporting, education & Research.

If you have problem with any of this images than you can inform us we will remove that element immediately. 


পরিশেষ বলা যায়

বিরিয়ানি রান্নার রেসিপি অথবা বিরিয়ানির রেসিপি সম্পর্কে মোটামুটি বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, আমার অজান্তে অনেক বিষয় ছুটে যেতে পারে এমনটা হলে কমেন্ট করে জানাবেন আমি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব।
 
আমাদের বিরিয়ানি রেসিপি আপনার কতটা কাজে এসেছে সেটাও কমেন্ট জানতে পারেন। আপনার সামান্য উপকার করতে পড়লে আমি খুশি হব।



Next Post Previous Post