ইসলামিক গল্প | ইসলামিক ছোট গল্প

ইসলামিক গল্প, ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প


গল্প সব সময়ই আমাদের চরম আগ্রহের বিষয় ছিল। ছোট থেকেই আমরা সবাই গল্প শোনার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলাম। যদিও এখনও এর ব্যতিক্রম খুব একটা হয়নি। এখনো আমরা গল্প করি, গল্প শুনি, এমনকি ভিডিও এর মাধ্যমে বিভিন্ন গল্প দেখি।তাই গল্পের প্রতি আগ্রহটা আমাদের এখনও সেরকমই আছে। আর সে গল্প যদি ইসলামিক গল্প বা ইসলামিক কাহিনী হয় তাহলে তো কথাই নেই।  

তাই এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে কিছু ইসলামিক ছোট গল্পইসলামিক কাহিনী ভাগাভাগি করে নিতে এসেছি। যার থেকে শিক্ষা নিয়ে যেন আমরা সবাই নিজেদের জীবন ইসলামিক তরিকায় সাজাতে পারি। ( ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প

ইসলামিক ছোট গল্প 

ইসলামিক গল্প আমাদের ইসলাম সম্বন্ধে শিক্ষা দেবে ও নিজেদের মধ্যে নৈতিক ও ধার্মিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে সহায়তা করবে এমনটাই হওয়া তো স্বাভাবিক; তাই নয় কি? ইসলামিক ছোট গল্পইসলামিক কাহিনী যদি আমাদের ইসলাম সম্পর্কে তথ্য দিয়ে অনুপ্রাণিত করতে না পারে তাহলে তাকে কিভাবে শিক্ষামূলক ইসলামিক গল্প বলা যায়? ( ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প )

এই আর্টিকেলে আমি যে কয়েকটি ইসলামিক গল্প আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব তার প্রত্যেকটি থেকেই কিছু না কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আপনি অবশ্যই নিতে পারবেন; এবং এই ইসলামিক গল্প ও কাহিনী গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন।


ইসলামিক গল্প 

অন্য কোন বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে আমি ইসলামিক গল্প গুলো সরাসরি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই। এতে আপনারা সহজেই হাতের নাগালে ইসলামিক গল্প ও কাহিনী গুলো পেয়ে যাবেন এবং কোন ধরনের ঝামেলা পোহাতে হবে। 

ইসলামিক ছোট গল্প, ইসলামিক গল্প
ইসলামিক গল্প


ইসলামিক ছোট গল্প ১ 

প্রথমেই যে ইসলামিক ছোট গল্পটি আপনাদের শোনাতে চাই সেটি দুই বন্ধুর মধ্যে ধর্মতাত্তিক গবেষনামূলক আলোচনা নিয়ে একটি একটি  ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প। সুন্দর এই ইসলামিক গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে এই আশা করেই গল্পের দিকে এগোলাম। 


আমার জান্নাতে যাওয়া 

আবুল কালাম স্নাতক অধ্যায়ন সম্পন্ন করতেই গ্রাম থেকে শহরে আসলো। গ্রামের আরামদায়ক ও গোছানো জীবনের সাথে শহরে বিশৃংখল ও রসহীন জীবনের পার্থক্যটা প্রথমদিন থেকেই সে ভালোভাবে আঁচ করতে পারছে।  কিন্তু যেই সমাজে উচ্চশিক্ষাকে নীতি শিক্ষার থেকেও বেশি স্কোর দিয়ে মূল্যায়ন করা হয় সেই সমাজে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে কি উপায় আছে? 

শহরকেন্দ্রিক নতুন শিক্ষাজীবনে বেশকিছুদিন পার করেও খুব বেশী পরিমানে ভালো বন্ধুর সন্ধান পেল না কালাম। নিজের ইসলামিক মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে সে যেমন পশ্চিমা সাজে সজ্জিত ছেলেমেয়েদের বন্ধু হিসেবে বরণ করতে পারছে না, ঠিক তেমনি ভাবে আধুনিকতার ধোকায় থাকা ছেলে গুলো তাকে কোনরকম আগ্রহের সাথে বরণ করছে না।

কিন্তু কালামের মালিক তাকে আর বেশিদিন শূন্যতা ও হতাশার মধ্যে রাখলেন না। সেদিন নতুন এক ছেলের সাথে কালামের এর পরিচয়। যার নাম বিশাল; বিশাল শান্ত স্বভাবের, যেকোনো বিষয়ে গভীর পর্যালোচনা ও অন্তর্নিহিত জ্ঞান অর্জন তার স্বভাব গুলোর মধ্যে অন্যতম। আর সেই জন্যই হয়তো সে আবুল কালামকে উপযুক্ত বন্ধু ভাবে; যেন সহজেই কোনো বিশৃঙ্খলা বা আড্ডাবাজির মধ্যে নিজেকে না জড়িয়ে ফেলে। 

তবুও যখনই কোন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় তাদের আসর যেন জমে যায়। কেননা দুজনেই গভীর জ্ঞানের সন্ধানী। তাদের দর্শন শক্তির প্রয়োগ আলোচনাকে গভীর থেকে গভীরে নিয়ে যায়। একজন ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী ও মতাদর্শের বন্ধুর বিবেকে নিজেকে পরিমাপ করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভালই যাচ্ছিল কালামের প্রতিটি দিন। 

কিছুদিন পরের ঘটনা, বিশাল রায় কালামকে বাইরে খেতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। বন্ধুর দাওয়াতে রাজি হয়ে দুজনে মিলে খাবার গ্রহণের জন্য একটি রেস্টুরেন্টে যায়। খাবার গ্রহণের সময় বিশাল রায় অবাক হবে লক্ষ করল যে, কালাম এমনভাবে খেয়েছে যেন তার থালা দেখলে মনে হয় সে এখনো থালাটি ব্যবহারই করে নি। তবে এই ব্যাপারে বিশাল রায় কালামকে কোন ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাস না করেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসলো। 

এরপরে তারা বাইরে এসে রাস্তার ধারে একটি টং-এর দোকানে দাঁড়ালো এবং বিশাল রায় আবুল কালাম কে একটি সিগারেট খাওয়ার প্রস্তাব দিল। সিগারেট খাওয়ার প্রস্তাব নিয়ে কামাল সরাসরি না করে দিল। বিশাল রায় এবার প্রশ্ন করল তুমি কেন সিগারেট খাও না? এখন তো তুমি ম্যাচিউরড।


কালাম> আমাদের ধর্মে ধুমপান বা নেশা দ্রব্য পানে বাধা থাকায় ্সিগারেট বা মদ কোনটাই খাই না।  এই ধরনের ধর্মবিরোধী কাজ আমার জান্নাতে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে । 

বিশাল অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল।

বিশাল> সিগারেট খাওয়ার মতো সামান্য কাজ কি জান্নাতে যাওয়ার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিভাবে?

কালাম> আমি শুধু সিগারেট খাওয়ার কথাই বলিনি আমি বলেছি ধূমপান বা মদ্যপান এর মত ধর্মবিরোধী সকল কাজেই আমার জান্নাতে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আর একটি  ধর্মবিরোধী কাজ করা মানে সকল  ধর্মবিরোধী কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া। 

বিশাল> পৃথিবীতে সব মানুষেই তো এই ধরনের কোন না কোন পাপ কাজ এর সাথে জড়িত, এমনকি মুসলিমরাও এদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত তাহলে কি সবাই জাহান্নামে যাবে? 

কামাল> সুন্দর একটি প্রশ্ন করেছো বন্ধু, জান্নাতে যাওয়ার বিষয়টি ঠিক তেমনভাবে কাজ করে না যেমন ভাবে তুমি ভাবছো কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে সেটা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।  তবে জান্নাতে যাওয়ার জন্য ইমান থাকা জরুরি, আল্লাহ বলেছেন, “ তিনি সব পাপ মাফ করবেন শুধু শিরক বাদে।” অর্থাৎ তিনি চাইলে যে কাউকে মাফ করে জান্নাতে দিতে পারেন। 

বিশাল> এই জায়গায় আমার একটা প্রশ্ন আছে, তুমি বললে জান্নাতে যাওয়ার প্রধান শর্ত হলো ঈমান থাকা জরুরি, অর্থাৎ আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করা। এখন পৃথিবীতে তিন ভাগের দুই ভাগ এরও বেশি মানুষ শের এই ইমানটি নেই। তারা কি সবাই জাহান্নামে যাবে? 

তুমি আমার কথায় ধরে নাও, আল্লাহ যদি আমাকে জান্নাতে দিতে চান তাহলে তিনি কেন আমাকে হিন্দু পরিবারে পাঠালেন? কারণ হিন্দু পরিবারের তো আমি এটা বিশ্বাস করব না যে আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা; এই পরিবারে আমাকে অন্য ধর্মবিশ্বাস লালন করতে শেখানো হয়েছে। তাহলে আমার জান্নাতে যাওয়ার কি হবে? তাহলে আল্লাহ কি আমাকে ইচ্ছে করেই জাহান্নামে দিতে চান? 

কালাম> কারো জান্নাতে যাওয়ার  সাথে তার পারিবারিক বা জন্মগত কোন সম্পর্ক থাকে না।  মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলেই যে তুমি পাক্কা ঈমানদার হবে এবং সরাসরি জান্নাতে যাবে এর কি গ্যারান্টি আছে?  মুসলিম পরিবারের ছেলেরা আজকাল ঈমান হারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি এমন সব ইসলাম বিরোধী কাজ করছে সেই কাজ একজন অমুসলিম পরিবারের ছেলেও করেনা। তাহলে সে কি জান্নাত যাবে? কখনই নয়। 

তুমি কোন পরিবারে জন্মগ্রহন করেছো সেই বিষয় তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে না বরং তুমি কোন বিশ্বাস নিজের মধ্যে ধারণ করেছে সেটাই তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।  আপাতদৃষ্টিতে তোমার মনে হতে পারে যে একজন অন্য ধর্মের পরিবারের জন্মগ্রহন করা ছেলের জন্য জান্নাতে যাওয়া অসম্ভব কিন্তু বিষয়টি একেবারেই এমন না। 

আল্লাহ সবাইকে একাধীকবার নিজের সৃষ্টি ও নিজের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ দেন। এই চিন্তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইতিহাসে অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছে এমনকি এখনও করেই চলেছে। আবার অনেক মুসলিম  নিয়ে ধর্ম বিশ্বাস ও সৃষ্টি নিয়ে সঠিকভাবে চিন্তা না করার জন্য গাফেল হয়ে জাহান্নামের পথে হাটছ। 

আল্লাহ তার প্রতিটি সৃষ্টিকে অসম্ভব ভালোবাসেন, এতটা যে আমরা কল্পনাও করতে পারিনা। তিনি তোমাকেও যেমনটা ভালোবাসেন ঠিক তেমনটাই আমাকে ভালোবাসেন। আমি দোয়া করব তিনি তোমাকে সঠিক বুঝ দান করুক। 

Next Post Previous Post