ড্রাগন ফলের উপকারিতা, চাষ পদ্ধতি, খাওয়ার নিয়ম ও অন্যান্য

ড্রাগন ফলের চাহিদা ও চাষাবাদ বাংলাদেশে বিশাল পরিসরে বিস্তার লাভ করেছে। এই ফলের জনপ্রিয়তা বর্তমানে তুঙ্গে। জাপানি এই ফলের চাষ পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এর ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভিন্নতা থাকায় এই ফলের প্রতি সকলের আগ্রহ বেশি। 

বাজারে ড্রাগন ফলের ভালো দাম থাকায় এই ফল চাষে কৃষকরা বেশ আগ্রহী। চলমান সময়ে বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের চাষ প্রতিনিয়ত বাড়তেই আছে। আজকের প্রতিবেদনে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি, উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও দাম সহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা হবে। 

ড্রাগন ফল এর উপকারিতা ও চাষের পদ্ধতি

ড্রাগন ফল ও এর পরিচয়

ড্রাগন ফল মূলত দক্ষিণ এশিয়া সহ বিশ্বে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক হারে চাষ করা হয়ে থাকে। জাপান, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় এই ফলের চাষের মাত্রা ও চাহিদা দুটোই বেশি। চীনে ড্রাগন ফলকে ফায়ার ড্রাগন নামে ডাকা হয়।

চীন বা থাই বৈজ্ঞানিক নাম অনুসারে ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হল "পিতায়া"। ড্রাগন ফল মূলত ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ থেকে উৎপাদিত। এই ফলের চাষ প্রক্রিয়া ও রক্ষণাবেক্ষণ অনেকটা ক্যাকটাস উদ্ভিদ চাষের মতই। 


ড্রাগন ফলের ধরন

ড্রাগন ফল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন, কোন কোন ফলের ভেতরের অংশ লাল আবার কোন কোনো ফলের ভেতরের অংশ সাদা রঙের হয়ে থাকে। 

তবে প্রতিটি ফল পরিপক্ব হলে একই রং ধারণ করে আর সেটি হল হল লালচে সবুজের ছোপ। এই রং অনেকটা রূপকথার ড্রাগনের সাথে মিল থাকার কারণে এই ফলকে ফায়ার ড্রাগন নামে ডাকা হয়। 


ড্রাগন ফলের উপকারিতা

অন্যান্য ফলের মতই ড্রাগন ফল একটি উপকারী ও খাবারের সুযোগ্য ফল। এই ফলের অন্যন্য কিছু পুষ্টিগুণ ও ভিটামিনের কারণে এই ফল অন্য ফলের তুলনায় বেশি উপকারী হিসেবে বিবেচিত। আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের জানানো হবে ড্রাগন দলের উপকারিতা সম্পর্কে। 

১. ডায়াবেটিস নিরাময়ে

ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তে সুগারের মাত্রা যতই কম থাকবে রোগীর জন্য সেটা ততই উপকার হবে। ড্রাগন ফলে সুগারের মাত্রা একটাই কম যে, এই ফল ভক্ষণের কারণে রোগীর ক্ষতি তো দূরের কথা বরং উপকার হয়। 

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অতি উপকারী উপাদান ইনসুলিন তৈরিতে ড্রাগন ফলের অবস্থিত পুষ্টি উপাদান যথেষ্ট ভাবে কার্যকরী। 


২. হৃদরোগ ও ক্যান্সারে উপকারী

ড্রাগন ফলে থাকে এন্টি অক্সিডেন্ট। শরীরে বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকলে দেহের কোষের ক্ষয়রোধ হয়। তাই বেশি বেশি ড্রাগন ফল খাওয়া কারণে হৃদরোগ ও ক্যান্সার এর মত জটিল রোগের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


৩. চুল পড়ার সমস্যা রোধে

নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া কারণে চুল পড়ার মত জটিল সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ড্রাগন ফলে থাকে আয়রন যা আপনার চুলের গোড়ায় অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। এতে করে আপনার চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুলের গ্রোথ হয় দ্রুততার সাথে। 


৪. ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল

আমাদের শরীরের স্কিন বা ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল বিশেষভাবে কার্যকরী। ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি ফাইব্রো-ব্লাস্ট এর মাধ্যমে আপনার ত্বকের কোর্সগুলোকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। 

এতে করে আপনার ত্বকের কোষ মৃত্যুর হার কমে যায় এবং ত্বকের খোসখসে ভাব দূর হয়ে যায়। তাই ত্বকের যত্নে নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া উপকারী।


৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও হজমে সহায়তা করে

ড্রাগন একটি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ এবং ড্রাগন ফল পানি জাতীয় একটি ফল। তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের হজমক্রিয়া ঠিক থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এর মত জটিল সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।


৬. রক্তশূন্যতা দূর করে

ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ ভিটামিন সি এর মত উপকারী সব পুষ্টি উপাদান। আমরা সকলেই জানি ভিটামিন এ শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে এবং দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখে। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি এর মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উপাদান থাকার কারণে এই ফল নিয়মিত ভক্ষণ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

এসব উপকারিতা ছাড়াও ড্রাগন ফলের আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে যেমন, ড্রাগন ফল নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের মেদ কমানো সম্ভব। এছাড়া ড্রাগন ফল নিজেই বহু কঠিন রোগের ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত।

তাই খেতে স্বাদ না হলেও ড্রাগন ফল এর উপকারিতা রয়েছে অনেক যা সামান্য একটি আর্টিকেলে উল্লেখ করে শেষ করা যাবে না। 


ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

ড্রাগন ফল খাওয়ার ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম বা পদ্ধতি নেই। এই ফল সাধারণত খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয়। একটি ফল দুই ভাগ করে কেটে, উপরের খোসা ছাড়িয়ে নিলেই ড্রাগন ফল খাওয়া সম্ভব। মূলত টুকরো টুকরো করে কেটে এই ফল খেতে হয়। 

অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে, কোনো কিছুর সাথে এই ফল মিশিয়ে খাওয়া যাবে কি না? যেমন, কাঁচা মরিচ ও লবণ মিশিয়ে এই ফল খাওয়ার ব্যাপারেও অনেকে জানতে চান। এভাবে ড্রাগন ফল খেলে কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।


ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

যেহেতু ড্রাগন ফল ও এর চাষ পদ্ধতি দুটোই নতুন তাই এই ফল চাষের আগে বিস্তারিত তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করে নেওয়া আবশ্যক। ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি খুব জটিলও নয় আবার খুব সহজও নয়। তবে এই ফল চাষের আগে অনেক বিষয়ে জেনে শুনে, অনেক তথ্য সংগ্রহ করার পরেই ড্রাগন ফল চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের। 

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি অনেক লম্বা প্রক্রিয়া তাই এই আর্টিকেল এই বিশাল প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ন আলোচনা করা সম্ভব না। তাই ড্রাগন ফল চাষ করার ব্যাপারে সকল তথ্য সহকারে একটি অন্য আর্টিকেল আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। 


পরিশেষে বলা যায়

আজকের পর্বে আপনাদের সাথে আলোচনা এই পর্যন্তই ছিল। ড্রাগন ফল ও বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা, দাম এর সাথে সাথে ড্রাগন ফলের উপকারিতা পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। আশা করি ড্রাগন ফল সম্পর্কে আপনাদের সাহায্য করতে পেরেছি। 

Next Post Previous Post