কুকুর পালা কি জায়েজ? কুকুর পালন, কুকুর পোষার উপকারিতা, কুকুর পোষা কেন হারাম? কুকুর পোষা কি জায়েজ?

একজন মুত্তাকির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো যেকোনো কাজ ইসলামিক তরিকায় করা। কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সেটি ইসলাম অনুসারে জায়েজ কি নাজায়েজ সে বিষয়ে যাচাই বাছাই করা একজন মুত্তাকী ও পরহেজগার বান্দার কর্তব্য।

তেমনি কুকুর পালা বা কুকুর পোষা ব্যাপারে যাচাই বাছাই করে নেওয়া আমাদের সকলের কর্তব্য। কুকুর পোষা কি জায়েজ? অথবা কুকুর পোষা যদি হারাম হয় কেন সেটি হারাম? কুকুর পালা কি জায়েজ নাকি নাজায়েজ? এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে কুকুর পালনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

এই লেখাটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন ইসলামিক কুকুর পোষা জায়েজ কিনা? কুকুর পালনের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? আপনি যদি কুকুর পুষতে আগ্রহী হন তাহলে একবার হলেও জেনে নিন কুকুর পালা জায়েজ কিনা?
  
কুকুর পোষা কি জায়েজ?

কুকুর পালন করা 

আমরা জানি একটি প্রভুভক্ত প্রাণী। আমাদের ঘর গৃহস্থলী পাহারা দেওয়ার কাজে কুকুর বেশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। সারারাত ধরে এই প্রাণীটি চোর এর বিরুদ্ধে শক্ত পাহারা চালিয়ে যায়। তাই কুকুরের প্রতি অনেকে মায়া করে কুকুর পালনে আগ্রহী হন।

এর বাইরেও পশ্চিমা কালচারে কুকুর পালনের প্রচলন থাকায় অনেকেই কুকুর পালন করাকে ভদ্রতা কিংবা সভ্যতা মনে করে। মূলত এসব কারণেই মানুষ বেশি করে কুকুর পালনের প্রতি আগ্রহ হয়ে যান। 

তবে একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, কুকুর পালন করা জায়েজ নাকি নাজায়েজ? ঘরে কুকুর পালন করলে কি কোনো ধরনের সমস্যা হবে? 


কুকুর পোষার উপকারিতা

কুকুর একটি উপকারী প্রাণী এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিছু অপকারিতার চিন্তা বাদ দিলে শুধু কুকুরের উপকারী দিক গুলো বিবেচনা করলে কুকুর সম্পর্কে একটি পজেটিভ ধারণা প্রতিষ্ঠা করা সহজ।

যেমন, কুকুর আমাদের ঘরবাড়ি পাহারা দেয়, ফসল পাহারা দেয়, শিকারের কাজে ব্যবহার করা যায়, চোর এর উপদ্রব রোধে কুকুর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এসব উপকারী দিক ছাড়াও কুকুর এর সাহায্যে অপরাধী সনাক্তকরণ বা অপরাধী অনুসরণ এর কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। 

যদিও এসব উপকারী দিক কুকুরের প্রতি আমাদের দুর্বল করে একটি মায়া জন্মায়। তা সত্ত্বেও ইসলাম কুকুর নিয়ে কি বলে সে বিষয়ে বিবেচনা করা সবচেয়ে বেশি জরুরী। 


কুকুর পালা কি জায়েজ নাকি নাজায়েজ?

ইসলাম ধর্মে কুকুর পালাকে পুরোপুরিভাবে নাজায়েজ বলা হয়নি। তবে ঘরের মধ্যে কুকুর পালন করা কিংবা শখের বসে বাড়ির ভেতরে কুকুর পালন করাটা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

কুকুর একটি নাপাক প্রাণী, এরা হারাম খাদ্যাভাস অভ্যস্ত। তাই বাড়ির ভেতরে এসব প্রাণীর অবস্থান ইসলামিক বিধান অনুসারে নিষিদ্ধ। তাই ঘরের মধ্যে বা বাড়ির মধ্যে কুকুর পোষা যাবে না।

হাদিস শরীফ থেকে পাওয়া যায়, "বাড়ির ভেতরে কুকুর থাকলে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না।"

অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, " যদি কোনো ব্যাক্তি বিনা প্রয়োজনে ( সখের বশে ) কুকুর পালে তাহলে প্রতিদিন তার আমলনামা থেকে ১ কেরাত পরিমাণ নেকী কেটে নেওয়া হবে।"

মুহাদ্দিস হন জানিয়েছেন ১ কেরাত পরিমাণ নেকী হল উহুদ পাহাড় এর সমপরিমাণ নেকী। এই পরিমাণ নেকী প্রতিদিন কেটে নেওয়া অর্থই জানিয়ে দেয় অপ্রয়োজনে বা শখের বসে কুকুর পোষা একজন মুসলিমের জন্য কতটা ভয়ানক।


কোন কোন ক্ষেত্রে কুকুর পোষা জায়েজ

কিছু কিছু কাজের জন্য ইসলামে কুকুর পালনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা নেই। যেমন, ঘরবাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য, ফসল পাহারা দেওয়ার জন্য কিংবা শিকারের কাজে কুকুর ব্যবহারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

তবে এসব ক্ষেত্রে কুকুর পালনের ব্যাপারে সাবধানতা হলো বাড়ির ভেতরে কুকুরের প্রবেশ করানো যাবে না। বাড়ির বাইরেই কুকুর পালন করতে হবে। 


পরিশেষে বলা যায়

কুকুর একটি উপকারী প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও এটি শখের বসে কিংবা অপ্রয়োজনে পালনের ব্যাপারে ইসলামিক স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে কিছু কাজের উদ্দেশ্যে কুকুর পালনের ক্ষেত্রে ইসলাম শিথিলতা দেখিয়েছে। 

পরিশেষে এটুকু বলা যায় আপনি যদি পশ্চিমা কালচার অনুসরণ করে অপ্রয়োজনে ( সখ করে ) কুকুর পালন করতে আগ্রহী হন বা তাদের মতো মানুষের চেয়ে কুকুর এর প্রতি বেশি ভালোবাসা প্রদর্শন করেন তাহলে এই বিষয়ে স্পষ্ট ইসলামিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবে।



Next Post Previous Post